ডিজিটাল প্রত্নতত্ত্বে নতুন করে জেগে উঠছে গুলকানা সাইট
Published : May 26 2025 , 12:43:46 am
Written By : bdfeature
এমিলি ফ্লেচার এর লেখা অবলম্বনে
আজ থেকে প্রায় এক হাজার বছর আগে, আলাস্কার বরফঢাকা ভূপৃষ্ঠে বাস করতেন একদল দক্ষ কারিগর। তারা স্থানীয়ভাবে পাওয়া তামা দিয়ে তৈরি করতেন সূক্ষ্ম ও কার্যকর অস্ত্র ও সরঞ্জাম। এত বছর পর, সেই প্রাচীন তামার জিনিসপত্রের এক-তৃতীয়াংশ পাওয়া গেছে একটি নির্দিষ্ট জায়গায়—আলাস্কার গুলকানা সাইটে। অথচ বিস্ময়কর হলেও সত্য, এই গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটির নাম অনেকেই জানেন না, এমনকি বহু গবেষকও নীরব এই ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞাত।
গুলকানা সাইট নিয়ে চার বছর ধরে গবেষণা করছেন পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক এমিলি ফ্লেচার। তিনি বলেন, “এটি আলাস্কার আদিবাসী আহ্তনা (Ahtna) জনগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষদের ইতিহাস বহন করে। কিন্তু এই জায়গাটি আজও কোনো জাদুঘরের প্রদর্শনীতে জায়গা পায়নি। স্থানীয় লোকজনও খুব কম জানেন তাদের শিকড়ের গল্প।”
একটি ইতিহাস, যার কণ্ঠরোধ করে রাখা হয়েছে
গুলকানা সাইট প্রথম আবিষ্কৃত ও খনন করা হয়েছিল প্রায় ৫০ বছর আগে। তৎকালীন গবেষকরা সাইট থেকে সংগ্রহ করেছিলেন অসংখ্য নিদর্শন ও রেকর্ড—তবে সেগুলোর বিশ্লেষণ আজও হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে যেসব প্রত্নতাত্ত্বিক খনন হয়, তার বেশিরভাগই উন্নয়ন প্রকল্প শুরুর আগে বাধ্যতামূলক 'কালচারাল রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট'-এর অংশ হিসেবে হয়। এসব খননের রেকর্ড রাখতে হয়, কিন্তু বিশ্লেষণের দায়িত্ব পড়ে ভবিষ্যতের গবেষকদের ওপর।
এই বিশাল অনাবিষ্কৃত তথ্যভাণ্ডারকে প্রত্নতত্ত্ববিদরা বলেন legacy data backlog—যেখানে পুরনো রেকর্ডগুলো পড়ে থাকে অপ্রকাশিত, অব্যবহৃত। এসব রেকর্ডের মধ্যে রয়েছে হাতে আঁকা মানচিত্র, নোট, ছবি, এমনকি স্থানিক (spatial) তথ্য।
ডিজিটাল ডেটার প্রাধান্যে এসব অ-ডিজিটাল উপাত্ত ভুলে যাওয়া হচ্ছে। অথচ একবার কোনো জায়গা খনন হলে, তার একমাত্র চিহ্ন থেকে যায় এসব রেকর্ডেই। ইতিহাসকে জানার জন্য এই তথ্যই আমাদের শেষ সুযোগ।
ডিজিটাল প্রত্নতত্ত্বে নতুন করে জেগে উঠছে গুলকানা সাইট
এমিলি ফ্লেচার নিজেকে বলেন ডিজিটাল পাবলিক আর্কিওলজিস্ট। অর্থাৎ, তিনি কেবল তথ্য উদ্ধারই করছেন না, বরং প্রযুক্তির মাধ্যমে পুরনো ডেটাকে বিশ্লেষণ করে তা জনসাধারণের জন্য অর্থবহ করে তুলছেন।
তার কাজের বড় একটি অংশ হচ্ছে পুরনো, হাতে লেখা নোটগুলোকে কম্পিউটারভিত্তিক সফটওয়্যারে রূপান্তর করা। এইভাবে ৫০ বছর আগের খননের মানচিত্র এখন বিশ্লেষণযোগ্য একটি ডিজিটাল ফর্মে রূপান্তরিত হচ্ছে। এতে করে বোঝা যাচ্ছে, তামার বস্তুগুলো কারা ব্যবহার করতেন—সবাই? নাকি কোনো বিশেষ শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত ছিল?
সম্প্রদায় ও প্রযুক্তির মেলবন্ধনে অতীতের সঙ্গে সংযোগ
তবে এই গবেষণা শুধু গবেষকের ডেস্কে সীমাবদ্ধ নয়। ফ্লেচার প্রতিবছর আলাস্কায় গিয়ে স্থানীয় আহ্তনা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজন করেন একটি কোর্স। এই কোর্সে অংশ নেয় স্থানীয় স্কুলের শিক্ষার্থীরা। তারা হাতে-কলমে শেখে গুলকানা সাইটের ইতিহাস, দেখতে পায় তামার প্রাচীন বস্তু, শেখে সেগুলো বানাতে, শোনে তাদের পূর্বপুরুষদের গল্প। সবশেষে তারা নিজেরাই তৈরি করে একটি ভিডিও গেম—যার মূল বিষয়বস্তু গুলকানা সাইট।
ফ্লেচার বলেন, “এই গবেষণার মাধ্যমে আমি শুধু পুরনো ইতিহাসই জাগিয়ে তুলছি না, বরং ভবিষ্যতের প্রজন্মকে তাদের শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত করছি, প্রযুক্তিগত দক্ষতা শিখাচ্ছি।”
পুরনো তথ্যের নবজাগরণ
গুলকানা সাইটের এই গল্প আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়—প্রত্নতত্ত্ব কেবল মাটি খুঁড়ে অতীত জানার বিষয় নয়, এটি ডিজিটাল যুগেও সমান প্রাসঙ্গিক। পুরনো ডেটাকে নতুনভাবে বিশ্লেষণ করলে তাতে লুকিয়ে থাকা বহু অজানা সত্য উঠে আসে।
আর এই সত্য শুধু গবেষকদের জন্য নয়—এটি হয়ে ওঠে জনগণের, একটি সম্প্রদায়ের, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্মৃতি ও গর্বের অংশ।
পুরনো ইতিহাস আমাদের অপেক্ষায় আছে। তাকে ছুঁয়ে দেখার জন্য আমাদের দরকার শুধু একটু মনোযোগ, একটু প্রযুক্তি, আর অতীতকে নতুন করে বোঝার ইচ্ছা।
যাওয়ার আগে...
আমাদের বিনামূল্যের নিউজলেটারগুলি প্রতিদিন সকালে আপনার ইনবক্সে উজ্জ্বলতম একাডেমিক লেখকদের কাছ থেকে সরাসরি সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য নিয়ে আসে।