তুমি কি গবেষক, না প্রযুক্তির অজান্তে প্রোপাগান্ডাকারী?
Published : July 02 2025 , 2:31:1 pm
Written By : bdfeature
গবেষণার ছাত্র তুমি?
তবে শোনো,
তুমি হয়তো থিসিসের জন্য ডেটা খুঁজছো, পেপার পড়ছো, AI ( কৃএিম বুদ্ধিমত্তা ) টুল দিয়ে ডেটা বিশ্লেষণও করছো। কিন্তু তুমি কি একবারও ভেবে দেখেছো ? তোমার ব্যবহার করা AI মডেল, তোমার সেই প্রিয় অ্যালগরিদম, যে নিরপেক্ষতার অমোঘ নীতিকথা উচ্চারণ করে, সে কি সত্যিই সকলের প্রতি সমান আচরণ করে? নাকি সে শুধু চিনে উন্নত শহরের নাম, ভালো স্কুল, ঝকঝকে ইংরেজি, আর ‘ভদ্র’ ভঙ্গিতে কথা বলা মানুষদের?
তুমি যদি এখন এসব না বোঝো, তাহলে একদিন তুমি হয়তো এমন এক রিসার্চ পেপার লিখে ফেলবে, যেটা তোমার অজান্তেই কারো ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দেবে। আসলে, এই যে আমরা মনে করি কম্পিউটার বা AI ভুল করে না, যন্ত্র বিচার করতে পারে নিরপেক্ষভাবে, এই বিশ্বাসটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। যন্ত্র শেখে মানুষের কাছ থেকে।আর মানুষ যদি পক্ষপাতপূর্ণ হয়,তবে যন্ত্রও পক্ষপাত শেখেতা সে যতই ডিজিটাল হোক না কেন।
এবার চলো, একটা ছোট্ট গল্প জানি,নওগাঁর শাহীন, RU-এর সোশিওলজি ডিপার্টমেন্টে মাস্টার্স করছে। থিসিস নিচ্ছে: বাংলাদেশের গ্রামীণ নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য সচেতনতা।
AI টুলে সার্ভে অ্যানালাইসিস চালায়।ডেটা দেয়, চার্ট ওঠে, কোরিলেশন বের হয়। সব কিছুই সুন্দর কিন্তু AI বলে,
“এই গ্রুপে health awareness কম, তাদের দায়িত্বহীন বলা যায়।” শাহীন ভাবে, “হ্যাঁ, এটাই তো বলছে ডেটা।” সে বোঝে না, এই নারীরা স্কুলে যেতে পারেনি,স্বাস্থ্যকেন্দ্র মাইলখানেক দূরে, স্বামী চিকিৎসা খরচ দিতে চায় না। আর AI যা জানে, তা তো শহরের নারীদের জীবন! এটাই হলো algorithmic bias। একটি চোখ, যা শুধু ঢাকার দিকে তাকিয়ে আছে। আর গ্রামের মানুষের কষ্ট,উপেক্ষীত সংগ্রাম ও লড়াই সবকিছু AI-এর কাছে “নথিভুক্ত” হয় না। এই ভুলটাকেই বলে AI Algorithmic Bias। বুঝতে পারছো না? আরও সহজ করে বলি যখন AI (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) এমন সিদ্ধান্ত নেয়, যেটা সব মানুষের জন্য ন্যায্য হয় না, বরং কিছু মানুষকে বেশি বা কম গুরুত্ব দেয়, কারণ তাকে একপেশে বা ভুল তথ্য দিয়ে শেখানো হয়েছে। তখনই সেটাকে বলে AI Algorithmic Bias।
আমরা প্রায়ই বলি “AI তো মানুষের থেকে স্মার্ট।” কিন্তু কেউ কি কখনও প্রশ্ন করেছে মানুষের ভুল, মানুষের অসৎ চোখ, মানুষের বৈষম্য এসব যখন যন্ত্রের খোলসে ঢোকে,
তখন সেটা আর যন্ত্র থাকে? নাকি শোষণের নতুন রূপ হয়ে ওঠে? MIT Technology Review-এর এক রিপোর্ট বলছে:৭০% এর বেশি AI রিক্রুটমেন্ট টুলসে জেন্ডার বা রেসিয়াল পক্ষপাত আছে।
আমি ভাবি,এই দেশে অনেক কিছু নিয়েই কথা হয়, তবু কেউ বলেন না এই মডেলগুলো আমাদের মতো পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে উঠছে। কেউ বলেন না AI-এর চোখও কারও দিকে বেশি তাকায়, কারও দিকে একদমই নয়। AI চিনে ইংরেজি মিডিয়ামের অ্যাকসেন্ট,উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, পুরুষ-শ্রেণির স্ট্যান্ডার্ড ডেটা, শহরের ভাষা, শহরের ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন।
কিন্তু যারা margin-এ আছো হিজড়া জনগোষ্ঠী, পাহাড়ি বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ,দরিদ্র কৃষক তাদের তো AI কখনো শেখেনি, কারণ তাদেরকে শেখানো হয়নি! তাদের বাস্তবতাকে কেউ input দেয়নি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তুমি কি চাও, তোমার গবেষণাটা একদিন AI ভুল ব্যাখ্যা করুক? না চাইলেও, তা হতে পারে যদি তুমি এখনই Bias না বোঝো। তুমি যদি একজন গবেষক হিসেবে Blindly এসব AI টুলস ব্যবহার করো, তোমার রিসার্চও ভুলের উপর দাঁড়িয়ে যাবে। তুমি হয়তো ভাববে, "আমি সঠিক বিশ্লেষণ করছি," অথচ তুমি হয়তো কারো প্রতি অন্যায় করছো নিজের অজান্তেই।
তাহলে তুমি করবেটা কী?
তোমার মতো হাজারো নতুন গবেষকের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে দরকারি বিষয় কী জানো? AI-এর Limitations বোঝা AI Use করার আগে জেনে রাখা এই চারটি প্রশ্ন:
১.ডেটা কোথা থেকে আসছে?
২.কে সেটাকে লেবেল করছে?
৩.তাতে কারা বাদ পড়ছে?
৪.তুমি কীভাবে Bias detect করতে পারো?
এই অংশটাই এখন গবেষণার বড় এক ক্ষেত্র। এটাকে বলে,“Fair AI Research” অথবা “Ethical Data Science”
গাঁদবাঁধা গবেষক হয়ে সেই বিশাল জলধারায় ভেসে থাকতে চাও,
নাকি তোমার প্রশ্ন দিয়ে গবেষণার স্বর্ণাক্ষর ছিনিয়ে আনতে চাও?
সবাই স্রোতের দিকে যায় তুমি কি সেই, যে বিপরীতে হাঁটতে সাহস রাখে?
কারণ, নাম নয়, চিহ্ন রেখে যাওয়াটাই গবেষণার প্রকৃত সম্মান।
শুধুমাএ কাগজে কলমে নয় নয় কাজে গবেষক হওয়াটাই স্বার্থক।কারণ গবেষণা শুধু উত্তর খোঁজে না প্রশ্নও তো তোলা। নতুন গবেষক হিসেবে তোমার প্রশ্নটা কী হবে?
লেখক পরিচিতি : লামিয়া আক্তার
শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
যাওয়ার আগে...
আমাদের বিনামূল্যের নিউজলেটারগুলি প্রতিদিন সকালে আপনার ইনবক্সে উজ্জ্বলতম একাডেমিক লেখকদের কাছ থেকে সরাসরি সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য নিয়ে আসে।