ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানে মার্কিন হামলা: কারণ কী, পরিণতি কী
Published : July 03 2025 , 6:40:10 pm
Written By : bdfeature
২২ জুন ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণে নতুন মোড় নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল সদস্য এবং বর্তমানে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক পলিসি বিভাগের অধ্যাপক জাভেদ আলী এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে বাস্তবভিত্তিক কয়েকটি পয়েন্ট বিশ্লেষণ করেছেন।
জাভেদ আলির মতে, এই হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি যুদ্ধের দিকে না গিয়ে কৌশলগতভাবে একটি মাঝামাঝি রাস্তা বেছে নিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সামনে যে-সব সামরিক বিকল্প ছিল সীমিত, মধ্যম ও সর্বাত্মক এই হামলাটি তার মাঝামাঝি ধরনের একটি পদক্ষেপ। এটি ছিল একবারে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা ধ্বংস করার চেষ্টা, যেন দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতে না জড়িয়েও পারমাণবিক হুমকি প্রশমিত করা যায়।
তবে জাভেদ আলী এ ক্ষেত্রে যুক্তি দেন, এই হামলা ছিল কেবল সামরিক নয়, রাজনৈতিকও। ট্রাম্প একদিকে যেমন বলেছেন, তিনি যুদ্ধ চান না, অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে বলেছেন “পারমাণবিক অস্ত্র ইরানে মেনে নেওয়া হবে না।” এই অভিযানে সেই দুই অবস্থানই একসাথে কার্যকর করা হয়েছে, একদিকে হামলা, অন্যদিকে সীমিত পরিসরে থাকা।
ইরান এখন কি করবে.?
তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি। ইরান এখন এমন এক অবস্থানে যেখানে কোনো প্রতিক্রিয়াই তাদের জন্য নিরাপদ নয়। তারা যদি কিছু না করে, তাহলে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণভাবে দুর্বল দেখাবে। আবার পালটা হামলা দিলে যুক্তরাষ্ট্রের আরও শক্ত প্রতিক্রিয়া ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে যখন তারা ইসরায়েলের সঙ্গে একাধিক যুদ্ধক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই জড়িত।
আবার , ইরানের প্রতিক্রিয়ার পথ অত্যন্ত সীমিত, তারা হয়ত বিদেশে গুপ্তহত্যা বা সাইবার হামলার মতো অপ্রচলিত পথে যেতে পারে, তবে সেখানেও ঝুঁকি অনেক। কারণ মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের মিত্রদের অবস্থানও এখন দুর্বল: হিজবুল্লাহ ও হামাস ক্ষতিগ্রস্ত, হুথিরা একা এবং সিরিয়া-ইরাকের শিয়া মিলিশিয়ারা নিষ্ক্রিয়।
ইরান এখন কার্ড হারিয়ে ফেলছে
আন্তর্জাতিক কূটনীতির প্রসঙ্গে, আলী বলেন, ট্রাম্প এখনো “আলোচনার জানালা” খোলা রেখেছেন, কিন্তু ইরানের ফরেইন মিনিস্টার আব্বাস আরাঘচি পরিষ্কার করে জানিয়েছেন, এখন আর কোনো কূটনৈতিক সমাধান সম্ভব নয়। আলির ভাষায়, ইরান এখন “কার্ড হারিয়ে ফেলেছে” অর্থাৎ আলোচনার টেবিলে তেমন কিছু দেওয়ার মতো অবস্থা তাদের নেই।
সবশেষে,জাবেদ আলী এখানে ইরান-আমেরিকার একটি ঐতিহাসিক ঘটনা তুলে ধরেন ২০২০ সালের সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে। তখনো ইরান হুমকি দিয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের প্রতিক্রিয়া সীমিত ছিল। এবার পরিস্থিতি আরও জটিল, কারণ এবার হামলা হয়েছে ইরানের মাটিতে এবং তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক সম্পদে।
জাভেদ আলির দৃষ্টিতে এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রের একক সিদ্ধান্ত হলেও, এর প্রতিক্রিয়া মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বহন করে। ট্রাম্প চাচ্ছেন নির্বাচনের আগে শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে, কিন্তু একটি ভুল পদক্ষেপ এই কৌশলগত ভারসাম্যকে ভেঙে দিতে পারে।
যাওয়ার আগে...
আমাদের বিনামূল্যের নিউজলেটারগুলি প্রতিদিন সকালে আপনার ইনবক্সে উজ্জ্বলতম একাডেমিক লেখকদের কাছ থেকে সরাসরি সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য নিয়ে আসে।